দেশে করোনার কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমেছে, পরিবারের যাবতীয় খরচের টাকা জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বাজারে দ্রব্যমূল্যের চলমান ঊর্ধ্বগতির লাগামও টেনে রাখা যাচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বেড়েছে পণ্যের আমদানিও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বড় ধরনের ভোগান্তিতে ফেলেছে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রের। এতে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারিত ঘরে আটকে রাখা না গেলে মুদ্রার বিনিময় হার, আমদানি ও রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ধনীরা আরও ধনী হওয়ার সুযোগে পাবেন। এমনটাই মনে করছেন অর্থনীতি বোদ্ধারা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ফলে পণ্য ও সেবা খাতের ব্যয় বেড়েছে। এ ব্যয় বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদের সদ্য শেষ হওয়া অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা থাকলেও বছর শেষে তা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে বলে আশা করা যায়। এর আগে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এ সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ হার আরও বেশি ছিল।
সরকারি বিপণন সংস্থার হিসাবে, দেশের বাজারে গত এক বছরে চালে ৭৯ শতাংশ, খোলা আটায় ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, খোলা ময়দায় ৩৭ দশমিক ৬৮, সয়াবিনে ২৮ দশমিক ১১, পাম অয়েলে ৩৮ ও মসুর ডালে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ দাম বেড়েছে।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের আয়ের একটি বড় অংশই ব্যয় হচ্ছে নিত্যপণ্য ক্রয়ে। যাদের মাসিক আয় ১০-১৫ হাজার টাকা, তাদের পক্ষে নিজের পরিবারের সবার তিন বেলার আহার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এটা মূল্যস্ফাতির হারের ওপর প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)- এর তথ্য বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বরে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ হয়েছে। এর আগের নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। এদিকে ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবরে বিশ্বের কিছু দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ তালিকায় থাকাদের মধ্যে রাশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, চিলি, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, পোল্যান্ডে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে।
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, এভাবে চলতে থাকলে মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারিত ঘরে আটকে রাখা কঠিন হবে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি বেড়েছে, এটি স্থিতিশীল ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না।
এমকে