কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা:
চলমান কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) ও বর্ষা মৌসুমের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভোলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ম আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায়। চলমান পরিস্থিতিতে নিজ পরিবারের জন্য খাবার যোগান বা সংসার চালানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন, আছেন দুশ্চিন্তার মধ্যে। শনিবার একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে মিলেছে এ তথ্য। করোনা সংক্রমন নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে এ লকডাউন আরোপ করেছে সরকার।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান যায়, প্রতিমাসের দোকান ভাড়া, বাসা ভাড়া, গুদাম ভাড়া, স্টাফদের বেতন, বিদ্যূৎ বিল ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এদিকে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের মধ্যে রিক্সাচালক,ভ্যানচালক, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, শ্রমিক শ্রেণীর লোকজন জানান, কাজ করতে না পারায় তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক দৈনিক তিন বেলার পরিবর্তে এক বা দুইবেলা খেয়ে, অনেকে না খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন। অনেক আবার ধার-দেনা, কেউ বা সুদের ওপর টাকা নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
রাস্তার মোড়ে কিংবা বাজারের পাশে ফুটপাতে বসা জুতা, তালা-চাবি ও ছাতা মেরামতকারীরা জানান- একদিকে থেমে থেমে বৃষ্টি, অন্যদিকে লকডাউনের কারণে মানুষের আনাগোনা নেই। তাই কমে গেছে আগের তুলনায় আয়।এতে সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
জুতা মেরামতকারী স্বপন জানান, লকডাউন চলার কারণে কোনো কাজ নেই। আমার পরিবারে দু’জন সদস্য। সবাই আমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই বসে আছি, কিছু আয় হয় সে আশায়। শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জগদিস জানান, লোকজন না থাকলে কিভাবে আয় হবে। ছাতা কারিগর মোঃ ছলেমান বলেন, বর্ষা মৌসুম চললেও কোনো কাজ নেই। লকডাউনের কারণে মানুষজন বের হয় না। আমরা এবার সাহায্য-সহযোগিতাও পায়নি। সংসার কিভাবে চালাবো দূচিন্তায় আছি। রিকশা চালক বাকের বলেন, আমার সংসারে ৭জন সদস্য রয়েছে। আমি রিক্সা না চালাতে পারলে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। লকডাউনের কারণে রাস্তায় লোকজন কম থাকায় আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। আমি সরকারি কোন সহযোগিতা পাইনি।অটোবোরাক চালক সবুজ মিয়া বলেন, ৫/৬ দিন ধরে বসে ছিলাম, বাসায় বাজার নেই। বোরাক চালাতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই পেটের দায়ে ভয়ে ভয়ে বোরাক নিয়ে বের হয়েছি। আরফুজা খাতুন নামের এক মহিলা বলেন, আমি খাবারের হোটেলসহ ডেকোরেটরে কাজ করে খাই। কিন্তু এখন কাজ সব বন্ধ। কী করে যে চলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার ছেলেটাও বেকার হয়ে গেছে। সামনে দিন কিভাবে কাটবে ভেবে সারারাত ঘুমাতে পারছি না। চা দোকানী এনায়েত চৌধুরী জানান, কঠোর লকডাউনের কারণে এতোদিন দোকান বন্ধ ছিল। জীবন-জীবিকার তাগিদে দোকান খুলে বসলাম, তাও বেচা-বিক্রি তেমন একটা নেই।
এমকে