খুলনা সংবাদদাতা:
পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, অক্সিজেনের উপস্থিতি, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পানির প্রবহতা, তাপমাত্রার মতো কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে নিজেদের আবাদের পুকুরেই গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদন করতে পারবেন চাষিরা। হ্যাচারি ছাড়া পুকুরেই যে গলদার রেণু উৎপাদন করা সম্ভব, সেটা করে দেখিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি)’র গবেষকরা। খুলনার উপকূলীয় বটিয়াঘাটার ছয়ঘরিয়া গ্রামের পুকুরে গবেষণা চালিয়ে গলদার রেণু উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন তারা।
এদিকে পুকুরে গলদার রেণু (পিএল) উৎপাদন করলে প্রাকৃতিক ও হ্যাচারি উৎসের ওপর নির্ভরতা কমবে। এতে রেণু সংগ্রহ নিয়ে ভোগান্তি কমবে গলদাচাষীদের। পুকুরে গলদা চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষকরা ২০২০ সালের শুরু থেকে এ গবেষণা চালায়। গবেষণার জন্য পুকুরটি লিজ নেয়া হয়। গবেষকরা পুকুরের পানিতে উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে কিছু প্রাকৃতিক ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশল কাজে লাগান।এভাবেই পুকুরের পানিতে গলদার রেণু উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন। তাদের উৎপাদিত রেণু দিয়ে এখন কয়েকটি অধিক্ষেত্রে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কয়েকটি মিনি পুকুরও রয়েছে।
প্রকল্পের কো-ইনভেস্টিগেটর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ এ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহকারি অধ্যাপক মো. শাহীন পারভেজ জানান, সলিডারেডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া, বাংলাদেশের সহযোগিতায় সেন্টার অব এক্সিলেন্স ফর ক্লাইমেট রেজিলেন্ট কোস্টাল ফুড সিস্টেমের আওতায় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রান্টস ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন এডুকেশন (গেয়ার) এর অর্থায়নে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান গবেষক ফিশারিজ এ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. নাজমুল আহসান জানান, হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদনে ধস নামায় এবং উপকূলের প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেণু আহরণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হওয়ায় চাষিদের রেণু সংগ্রহে সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন ও রফতানিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ধরনের প্রতিকূলতার কারণে চাষিরা গলদা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় তাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিলো- বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানিতে গলদা চিংড়ির রেণু উৎপাদন এবং এর মাধ্যমে রেনুর চাহিদা পূরণ করা। চাষিরা তাদের পুকুরে রেণু উৎপাদন প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারলে তা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। গ্রামের পুকুরে পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ বাড়লে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
গাজী সুফিয়ান/এমকে