২২ বছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন নুরনবীর বাবা-মা

০৯ অগাস্ট ২০২১

ভোলা প্রতিনিধি:

মারধর করায় দাদীর ওপর অভিমান করে ২২ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিল বয়স পাঁচের নূরনবী। অনেক খোঁজ, এমনকি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরও সন্ধান না মেলায় সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তার বাবা কাসেম হাওলাদার। কিন্তু এতদিন পর সেই সন্তানকে ফিরে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন বাবা-মা, আর স্বজনদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়।

কাসেম হাওলাদার ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ছাগলা গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে নুরনবী এ সময়ের মধ্যে বিয়েও করেছেন শরিয়তপুরের এক মেয়েকে, দুই মেয়ের বাবা তিনি।

কাসেম হালদার বলেন, প্রায় ২৭ বছর আগে জন্মগ্রহণ করে তার সন্তান। মাত্র ৭ দিন বয়সেই তার মা পারুল বেগম পারিবারিক কলহের কারণে নূরনবীকে রেখে অন্যত্র চলে যায়। তখন থেকেই নূরনবী দাদীর কাছে বড় হতে থাকে। তার বয়স যখন ৫, তখন একদিন দাদী তাকে পাটের শাক আনতে বলেন। কিন্তু পাটের শাক না এনে খেলতে যায় সে। খেলার সময় হাতে ব্যাথা পেলে দাদী তাকে মারধর করেন।

নুরনবীর বরাত দিয়ে এবার কাসেম হালদার জানান, বাড়ি থেকে বের হয়ে বোরহানউদ্দিন খেয়াঘাটে (লঞ্চঘাট) যায় সে। এরপর লঞ্চে ওঠে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছায়। সেখান থেকে ভুলে অন্য লঞ্চে ওঠায় চলে যায় শরীয়তপুর। সেখানে পৌঁছে কান্না করলে সফিপুর থানার বালা বাজার ইউনিয়নের সেলিম মাঝি তাকে সান্তনা দিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়। সেখান থেকে ১৬ বছর বয়সে ঢাকার কেরানীগঞ্জে আসে, জোগাড় করে নেয় দর্জির কাজ ও বসবাস শুরু করে ভাড়া বাসায়। এর মধ্যে তার বাড়ি থেকে চলে আসার কাহিনী অনেকেই জেনে যায়।

এদিকে নূরনবীর বাসার মালিকের বোনের প্রবাসী ছেলে একদিন বাবা-মার সন্ধানের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর জে কিবরিয়ার জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “আপন ঠিকানায়” যাওয়ার পরামর্শ দেন নূবনবীকে। পরবর্তীতে “আপন ঠিকানা” তাকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে। ভিডিওটি দেখে মিরাজ নামের এক যুবক তাকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেন।পরবর্তীতে মিরাজের সূত্র ধরেই কাসেম হাওলাদার আর জে কিবরিয়া’র অফিসে যান।

কাসেম হালদার বলেন, হারিয়ে যাওয়ার পর ছেলেকে প্রায় ১০ বছর ধরে পাগলের মতো খুঁজেছি। ছেলেকে খুঁজতে ঢাকা গেছি বহুবার। ঢাকার মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ বহু জায়গায় বহু টাকা খরচ করে খোঁজাখুঁজির পরেও ছেলেকে আর পাইনি। তিনি আরো বলেন, ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতারও হতে হয়েছিল আমাকে। নূরনবীর মা জানান, হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ফিরে পেতে অনেকের কাছে গেছি, অনেক টাকা নষ্ট করেছি। আজ আমার এ বুকের মানিককে ফিরে পেয়েছি। এখন আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে।নূরনবী তার বাবা-মাকে ফিরে পেয়ে বলেন, আমার এখন একটা পরিচয় হয়েছে, হয়েছে ঠিকানা। এতদিন আমি আমার বাবা-মার নাম জানতাম না।

কুতুবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান জোবায়েদ মিয়া বলেন, কাসেম হালদার তার বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ছেলে, তার স্ত্রী ও তাদের ২ মেয়েকে নিয়ে শুক্রবার এলাকায় এসেছেন।

কামরুজ্জামান শাহীন/এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর