বগুড়া প্রতিনিধি:
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে বগুড়ার শেরপুরের আমন চাষিদের। সঙ্কটের কথা বলে এ দাম নিচ্ছেন সার ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজেরা গুজব ছড়িয়ে সারা ব্যবসায়ীরাই ‘কৃত্রিম’ এ সঙ্কট সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্ততঃ চল্লিশ হাজার আমন চাষি, আর ঠিক সময়ে সার দিতে না পারলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে আমনের। গত দুই-তিনদিন ধরে সার সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন আমন চাষিরা। অথচ কৃষি বিভাগের স্থানীয় অফিস জানিয়েছে, উপজেলায় সারের কোনো সঙ্কট নেই।আর বাড়িতে দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সার ব্যবসায়ীরা। এদিকে সহজে তাদের সার পাওয়ার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগী চাষীরা।
আমন চাষিদের অভিযোগ, সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন- সার নেই। কিন্তু ব্যবসায়ীদের চাহিদা মতো টাকা দিলেই মিলছে সার। ৮’শ টাকার প্রতিবস্তা ইউরিয়া বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ থেকে ৯৫০টাকা, ১১শ’ টাকার টিএসপি ১২শ’ থেকে ১২শ’ ৫০টাকা, ৭শ’ ৫০টাকার এমওপি ৯শ’ টাকা ও ৮শ’ টাকার ড্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়। প্রথম দামটিই হচ্ছে প্রতিটি সারের সরকার নির্ধারিত দাম।
মাথাইলচাপড় গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম, ইউনুস আলী, আশরাফ আলী বলেন, জমিতে সার দেয়ার এখন উপযুক্ত সময়। সার কেনার জন্য বুধবার (১৮আগস্ট) একাধিক দোকানে গেলে প্রথমে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছে কোনো সার নেই বলে জানিয়ে দেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত প্রতিবস্তায় ১০০-২০০টাকা দিলেই সার পাওয়া যায়। গোলাম রসুল নামের একজন প্রান্তিক চাষী বলেন, ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। কিন্তু জমিতে সার দেয়া নিয়ে খুবই বিপদের মধ্যে আছি। চারা রোপণের আট থেকে দশদিনের মধ্যে ইউরিয়া সারের সঙ্গে আগাছানাশক কীটনাশক মিশিয়ে জমিতে দিতে হয়। কিন্তু পনের দিন পার হয়ে গেলেও ইউরিয়া সার সংগ্রহ করতে পারিনি।
চাষীদের অভিযোগ অস্বীকার করে সার ব্যবসায়ী ও ডিলাররা বলেন, বগুড়া বাপার গোডাউন থেকে চাহিদার তুলনায় সার সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই সারের এ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চাহিদা মতো সারের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিসিআইসি ১২ জন এবং বিএডিসির ২১জন ডিলার সার বিক্রি করছেন। এখানে সারের কোনো সঙ্কট নেই।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক উপজেলার কয়েকজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জানান, কতিপয় ডিলার-ব্যবসায়ী ও খুচরা সার বিক্রেতার সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারাই কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি দেখিয়ে সারের দাম বাড়িয়েছেন।
শেরপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ছামিদুল ইসলাম জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইউরিয়া বিক্রি করা যাবে না। সারের কোনো সঙ্কট নেই। বেশি দামে বিক্রি করলে প্রমাণসহ কৃষকেরা যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, চলতি মাসে ইউরিয়া সারের বরাদ্দ রয়েছে ৯০৭ মেট্রিকটন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২৬০মেট্রিকটন উত্তোলন করা হয়েছে।
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে সারের কোনো সঙ্কট নেই। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বেশি দামে সার বিক্রি করা আইনত দণ্ডণীয় অপরাধ। খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দীপক কুমার সরকার/এমকে