একটানা কাজ করেও বেটা ছাওয়ার চেয়ে মজুরি কম পাই

৩০ অগাস্ট ২০২১

এম এ মাসুদ, সুন্দরগঞ্জ(গাইবান্ধা) :

স্বামী মারা যাওয়ার পর সন্তান ও নিজের পেট বাঁচাতেই কামলা দেন বানেশ্বরী। আর ঘরে অচল স্বামী রেখে জমিতে আনোয়ারা কাজ করছেন- পরিবারের খাবার ও স্বামীর ওষুধ কেনার টাকা যোগাড়ের জন্য। তাদের আরেক সহকর্মী জেলেখার কাহিনীও প্রায় অভিন্ন। তারা বলছেন, সকাল ৯টা থেকে আসর নামাজের আযান পর্যন্ত কাজ করতে হয়। বসে থাকি না, একটানা কাজ করি। তারপরও বেটা (পুরুষ) ছাওয়ার চেয়ে মজুরি কম পাই। এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না।

বানেশ্বরী, আনোয়ারা, জেলেখার মতো গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বাকি নারী শ্রমিকরা চলতি আমন মৌসুমে মজুরি বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন। পুরুষের চেয়ে অর্ধেক মজুরিতে ও সহজে পাওয়ায় উপজেলায় নারী শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। পুরুষ শ্রমিকের কাজে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা ও বেশি উপার্জনের আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাওয়া নারী শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ার আরেক কারণ।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ১ লাখ ২২ হাজার ৬শ' ২০ জন কৃষক তাদের ২৮ হাজার একশ ৯৩ হেক্টর জমিতে আমন করেছেন। চারা লাগানোর শেষে এখন চলছে পরিচর্যার কাজ।

রোববার উপজেলার চাচিয়া মীরগঞ্জ, নওহাটি চাচিয়া, তারাপুর, বামনজল, নাচনী ঘগোয়ায় আমনের আবাদি জমি ঘুরে দেখা গেছে, ধানের চারা নিড়ানোর কাজে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। নিজের সংসার খরচ চালাতে, স্বামীর চিকিৎসা ও সন্তাদের মুখে খাবার তুলে দেয়াসহ পড়াশোনার খরচ যোগাতেই কাজ করছেন স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা ও অসচ্ছল পরিবারের এসব নারী। তাদের তথ্যমতে, পুরুষ শ্রমিকরা প্রতিদিন সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা মজুরি পাচ্ছেন, একই পরিমাণ কাজ করে তারা পাচ্ছেন ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ টাকা।

নারী শ্রমিক নিযুক্তকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ জন কৃষক বলছেন, পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় নারী শ্রমিক সস্তা। তাছাড়া পুরুষ শ্রমিক সহজে পাওয়াও যায় না। তাই নারীদের দিয়েই কাজ করাতে হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রাশেদুল কবির বলছেন, উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৭১৫ জন আর নারী শ্রমিক প্রায় ৪ হাজার ৫৩৫ জন। নারীদের মজুরি তুলনামূলকভাবে কম বলেও জানান তিনি।

 

এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর