লোকসান দরে বগুড়ার মোকামে বিক্রি হচ্ছে আলু

০৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি:
আলুর মোকাম হিসেবে পরিচিত বগুড়ার পাইকারি বাজারে লোকসান দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। গত কয়েক দিনের বাজার দরের হিসাবে এ অঞ্চলের আলুচাষী ও ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩২০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বগুড়া ও জয়পুরহাট নিয়ে গঠিত বৃহত্তর বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য এবং আরবি হিমাগারের চেয়ারম্যান পরিমল প্রসাদ রাজ। এদিকে উৎপাদন ও কোল্ড স্টোরেজে রাখার খরচও না ওঠায় হতাশার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে স্থানীয় আলুচাষী ও ব্যবসায়ীদের মাঝে।

গত সপ্তাহেও খুচরা দরে যেখানে আলুর কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়, সেখানে বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। পাইকারি বাজারে এ দর ১১ টাকা। অথচ উৎপাদন থেকে কোল্ড স্টোরেজে রাখা পর্যন্ত এক কেজি আলুর পেছনে কৃষক ও ব্যবসায়ীর খরচ হয়েছে ১৭-১৮ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজিতে ৬-৮ টাকা লোকসান গুনছেন তারা।

বগুড়ায় সবজিবাজার খ্যাত মহাস্থান বাজারে আলু কিনতে এসেছিলেন আলাল হোসেন, আব্দুর বারিক ও লোকমান হোসেন।তারা জানান, পাইকারি ১২ টাকা আর খুচরায় ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। কিছু ভালো মানের আলু বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে। ১৫ দিন আগেও এ আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা কেজি। আলুর দাম হঠাৎ কমে এসেছে।

বগুড়া সদর উপজেলার বারপুর, ঘোড়াধাপ, মরাকাটা, চাঁদমুহা এলাকার কয়েকজন আলু চাষির জানান, গত বছর মৌসুমের সময় খোলা বাজারে একেবারে ভালো মানের আলুর দর ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি। এছাড়া অন্য মানের আলু বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি। অথচ সেই আলু চলতি বছর এসে বর্তমানে কোল্ডস্টোরেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১০ টাকা কেজি। কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণে ব্যবসায়ীদের সব মিলে খরচ পড়েছে প্রায় ১৭ টাকা কেজি।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয় জেলায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন পাওয়া যায়। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, এবার বন্যা হয়নি। সবজি রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। তাতে আলুর চাহিদা সামান্য কমেছে। তাছাড়া বগুড়া অঞ্চল থেকে অন্য জেলায় আলু খুব একটা যায়নি। সব মিলিয়ে আলুর বাজার দর কমে গেছে। হিমাগারের আলু খালাস না করলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে।

চেয়ারম্যান পরিমল প্রসাদ রাজ আরো জানান, করোনাকালে আলু খালাস ও অন্যান্য জেলায় সরবরাহ হয়েছে কম। সামনে আলুর সিজন আসছে। তাই আলু খালাসের তাড়া রয়েছে ব্যবসায়ীদের। সংরক্ষণ করা আলু একযোগে খালাস হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দরপতন হয়েছে। তিনি জানান, এবার ৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আলু সংরক্ষণ করা আছে বগুড়া-জয়পুরহাটের ৫৫টি হিমাগারে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন বীজ আলু। বাকিটা বিক্রির জন্য। বর্তমানে কেজিতে লোকসানের অঙ্ক হিসেবে ৩২০ কোটি টাকা লোকসানের হিসাব দেন তিনি।

দীপক কুমার সরকার/এমকে

 

 


মন্তব্য
জেলার খবর