'পূর্ণিমার চাঁদ' বগুড়ার চার সন্তানের হাতে!

০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

দীপক সরকার, বগুড়া:
খোঁজ ছিল না ২২ বছর। তাই মারা গেছেন বলেই ধরে নিয়েছিলেন আমেনা খাতুনের সন্তান ও স্বজনেরা। মা হারানোর কষ্ট বুকে থাকলেও এক সময় স্বাভাবিক হয় তাদের জীবনযাত্রা। কিন্তু এর মধ্যেই যেন পূর্ণিমার চাঁদ ধরা দিয়েছে তাদের হাতে, ৮০ বছর বয়সে তাদের মা ফিরেছেন নেপাল থেকে। এ নিয়ে তাদের ঘরে চলছে যেন ঈদের আনন্দ! সিনেমার মতো এমন ঘটনা বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাঝবাড়ি গ্রামের।

সরকারের সহযোগিতায় গেল সোমবার রাতে নেপাল থেকে দেশে ফেরেন আমেনা খাতুন, বর্তমানে একই উপজেলার ছোটচাপড়া গ্রামে নিজের বড় ছেলের বাড়িতে অবস্থান করছেন আমনো। তাকে এক পলক দেখতে ভীড় জমাচ্ছেন অনেকে।

আমেনা খাতুন মাঝবাড়ি গ্রামের আজগর আলী’র স্ত্রী। আমজাদ হোসেন, ফটিক মিয়া, ফরিদ মিয়া এবং আম্বিয়া খাতুন নামের চার সন্তান রয়েছে তার। এদিকে আমেনাকে ফিরে পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

বয়স আশির ঘরের আমেনার স্মৃতিশক্তি অনেকটা লোপ পেয়েছে। তাই অসংলগ্ন কথা বলেছেন, কীভাবে নেপালে গেলেন- সেই স্মৃতিও মনে করতে পারছেন না। স্বজনদের দেয়া তথ্যানুযায়ী ১৯৯৮ সালে তার মেঝো ছেলে সৌদি আরবে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকায় আসেন। এ সময়ে আমেনা খাতুনও বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ ছিল না। তার অসংলগ্ন কথা-বার্তায় যতটুকু জানা যায়, চট্টগ্রাম হয়ে ভারতে পৌঁছান। তারপর দূর্গাপুজার মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে নেপালে যান। সেখানে বাসা-বাড়ি ও হোটেলে কাজ করতেন। বার্ধক্যের কারণে কাজ করতে না পারায় ফুটপাতে অবস্থান করতেন। পরে ইনারোয়া পৌরসভার কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সুনসারি জেলা প্রশাসনের সেফ হাউসে রাখেন।

এদিকে আমেনা খাতুনকে নিয়ে শনিবার নেপালস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার মাসুদ আলম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘নেপালে ২২ বছর পর মায়ের সন্ধান পেলেন বগুড়ার আমজাদ হোসেন প্রমাণিক।’ তিনি জানান, ইনারোয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র যমুনা গৌতম পোখরেলের তত্ত্বাবধায়নে বাংলাদেশের একজন নারী রয়েছেন। বিষয়টি গত ৩০ মে ফেসবুকে উল্লেখ করেন নেপালের সুনসারি জেলার কুইক রেসপন্স সেন্টার ইনারোয়া সুনসারির মুকেশ মেহতা। স্ট্যাটাসটি দেখে নেপাল বাংলাদেশ ইয়্যুথ কনক্লেভের চেয়ারম্যান অভিনাভ চৌধুরী কমেন্টসে তাকে মেনশন করেন। এরপর আমিনার সঙ্গে কথা বলে ঠিকানা জোগারে প্রথমে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় আলাপচারিতায় ঠিকানা পান তিনি। এরপর বগুড়া জেলা অফিসের প্রচেষ্টায় ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত হন।

গত ঈদুল ফিতরের আগে তার সন্তানদের কাছে আমেনা খাতুনের নেপালে থাকার বিষয়টি জানান জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) লোকজন। পরিচয় নিশ্চিত করতে আমেনা খাতুনের ছবিও দেখান তারা। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর মাসুদ আলম সন্তাদের সঙ্গে আমেনার ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। ভিডিও কলে নিজের সন্তান-স্বজনদের চিনতে পারেন আমেনা খাতুন।
আমজাদ হোসেন ও আম্বিয়া খাতুন জানান, দীর্ঘদিন খুঁজেও মাকে না পাওয়ায় তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের বিষয়টি মৃত উল্লেখ করেন তারা। তারা বলেন, ‘যখন খবর পাই মা বেঁচে আছেন, তখনকার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’

বগুড়া এনএসআইয়ের উপ–পরিচালক মুজাহারুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘নেপালে বাংলাদেশি দূতাবাসের কনস্যুলার মাসুদ আলমের তথ্য পেয়ে আমরা ওই নারীর ঠিকানা খুঁজে বের করি। মাসুদের দক্ষতা ও বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতার কারণেই ওই নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।’

এমকে

 


মন্তব্য
জেলার খবর