রোহিঙ্গা সঙ্কট আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, প্রত্যাবাসনের অগ্রগতির ঘাটতিতে হতাশা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে, অতি সহজে জঙ্গিবাদী মতাদর্শের শিকার হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তাই এ ব্যাপারে জরুরি প্রস্তাব গ্রহণ করা প্রয়োজন।বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। আর সঙ্কট সমাধানে পাঁচ দফা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের ঘিরে বাংলাদেশ যা কিছু করছে, সেটা সম্পূর্ণরূপে অস্থায়ী ভিত্তিতে করা হচ্ছে। তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়া নিশ্চিতের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যা কিছু করা সম্ভব তা অবশ্যই করতে হবে। নিজেরাও নিজ দেশে ফিরতে চায় রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের আন্তরিক প্রচেষ্টা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ বজায় রাখা হয়েছে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে চীন ও ভারতসহ প্রধান শক্তিগুলোকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। চেষ্টা চালানো হয়েছে আসিয়ানকে আরো সক্রিয় রাখার। বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মনোযোগ আকর্ষণে জাতিসংঘ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ধরে রাখা হয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশের চালানো প্রচেষ্টা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও তার জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি। তিনি বলেন, এ সঙ্কটের পঞ্চম বছর চলছে, এখনো রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি স্থায়ী সমাধানের আশা রাখছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সরকার প্রধান বলেন, এ সঙ্কট সমাধান করা আমাদের একটি সম্মিলিত দায়িত্ব এবং বিভিন্ন সীমান্তে এর প্রভাব পড়ছে। এ ব্যাপারে অতি দ্রুত কিছু করতে ব্যর্থ হলে সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মহাবিপদে পড়বে আমাদের।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া পাঁচ পরামর্শ হচ্ছে- অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবারই জোরালো প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অনিশ্চয়তা দূরীকরণে মিয়ানমারে রাজনৈতিক দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটানো এবং সঙ্কট সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার একটি সংশোধন প্রয়োজন। আসিয়ানের প্রচেষ্টা জোরদার করা, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের পদক্ষেপ মিয়ানমারকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও তাদের ধারণক্ষমতার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে জাতিসংঘ ও অংশীদারদের অবশ্যই মিয়ানমারে স্পষ্ট বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠীর আস্থা সৃষ্টিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গুরুত্বপূর্ণ।
এমকে