বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে চার কিশোরকে নির্যাতন

১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি:

প্রতিবন্ধী পিতার মাদ্রাসা পড়ুয়া চৌদ্দ বছরের সন্তান ফিরোজ হাসান। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য কাজ নিয়েছিল এক কুঁড়ার মিলে। তার সঙ্গেই কাজ নেয় তারই তিন বন্ধু- মেহেদী (১৫), তুষার (১৪) ও তুহিন (১৩)। কাজও করছিল ঠিকঠাক। কিন্তু মজুরি চাইলেই শুনতে হতো অনেক গালমন্দ। মজুরি না পাওয়ায় সেই কাজ ছেড়ে দেয় তারা । কিন্তু পাওনা পরিশোধের তাগিদ দিতে থাকে মিল মালিককে। এরই এক পর্যায়ে মিলমালিক তাদের বাড়ি থেকে নিজের মিলে ডেকে নেয়। চুরির অপবাদ দিয়ে সেখানকার একটি ঘরে আটকে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। তাদের চিৎকারে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ভুক্তভোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বগুড়ার শেরপুরের গাড়িদহ ইউনিয়নের জুয়ানপুর এলাকায়। ভুক্তভোগীরা উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের মহিপুর কলোনী গ্রামের বাসিন্দা।

এদিকে এ ঘটনায় মিলমালিকসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের নামে থানায় মামলা হলেও এখনো তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলাটি করেছে তুষার ও তুহিনের বাবা স্বপন আলী। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

ফিরোজ হাসান জানান, বৈদ্যুতিক তার চুরির অপবাদ দিয়ে ইয়াকুবসহ চারজন লোহার রড়, বাশঁ, কাঠ, হাতুড়ি ও প্লায়ার্স দিয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের চামড়া তুলে নেওয়া হয়। মেহেদী, তুষার ও তুহিন একই ধরণের কথা বলেন। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

ফিরোজ আরও জানায়, মিলের মালিক মহিপুর জামতলা গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে ইয়াকুব আলী বলেছিল- তাদেরকে প্রতিদিন ৫৫০ টাকা হারে মজুরী দেওয়া হবে। কিন্তু তারা কাজ করলেও নিয়মিত পারিশ্রমিক দেওয়া হতো না। এভাবে তাদের পাওনা ১৪ হাজার টাকা আটকে রাখা হয়।

মেহেদীর মা মিনা বেগম বলেন, “প্রতিবেশিদের কাছে সংবাদ পেয়ে আমি মিল ঘরে গিয়ে আমার ছেলে ও তার বন্ধুদের উদ্ধারের চেষ্টা করি। এ সময় মিলমালিক ইয়াকুব আমাকে শারিরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় তাদের উদ্ধার করি।” তুষার ও তুহিনের বাবা রংমিস্ত্রী স্বপন বলেন, “আমার দুই সন্তানকে তারা পিটিয়েছে। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের তালু ও পায়ের চামড়া তুলে নিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তুহিনের পা ভেঙ্গে দিয়েছে। টাকার অভাবে তাদের চিকিৎসা করাতে পারছি না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।”

শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়েছি। বুধবার রাতে ইয়াকুবসহ চার জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচষ্টার মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

 

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর