দুই সেকেন্ডের জন্য বিজ্ঞানীরা এমন শূন্য তাপমাত্রাকে স্পর্শ করে ফেললেন, যেখানে আলো তরল হয়ে যায়। আলোকে তরলের মতোই পাত্রে ঢালা যায়। যে তাপমাত্রায় একটি পরমাণু একই সঙ্গে দুটি জায়গায় থাকে।
জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পদার্থবিজ্ঞানী এ সম্পর্কিত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি এটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
বহু দশকের চেষ্টার পর বিজ্ঞানীরা এবার সেই হাড় জমিয়ে দেওয়া শূন্য তাপমাত্রার ঠিক ৩৮ লক্ষ কোটি ভাগ আগের তাপমাত্রায়।
তাপমাত্রার কোনও ঊর্ধ্বসীমা না থাকলেও নীচে নামতে নামতে তা এক জায়গায় থমকে দাঁড়ায়। সেই জায়গার চেয়ে আর নীচে নামতে পারে না তাপমাত্রা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় সেই তাপমাত্রাই পরম শূন্য তাপমাত্রা। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের ২৭৩.১৫ ডিগ্রি নীচে। মাইনাস ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা মাপার আর একটি দাঁড়িপাল্লায় যা মাইনাস ৪৫৯.৬৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই পরম শূন্যের নীচে তাপমাত্রার পক্ষে নামা আর সম্ভব হয় না। এটাকেই বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় শূন্য ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রা।
হাড়জমানো ঠাণ্ডার মহাজগৎ- মহাকাশের গড় তাপমাত্রাও থাকে এর আড়াই ডিগ্রিরও বেশি উপরে। মহাকাশও পৌঁছতে পারে না শূন্য ডিগ্রি কেলভিন তাপমাত্রায়। তাই সঠিক হিসাবে মহাকাশের গড় তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি কেলভিন। বা প্রায় মাইনাস ৪৫৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
অণুদের চলাচল ও সংঘর্ষের ফলে জন্ম হয় কম্পনের। তাপমাত্রা সেই কম্পনেরই পরিমাপক। তাই পরম শূন্য এমনই একটি তাপমাত্রা যেখানে পৌঁছনো সম্ভব হলে কোনো অণুর পক্ষেই আর নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকবে না। সে হয়ে পড়বে আক্ষরিক অর্থেই স্থবির।
বিজ্ঞানীরা কাজটি করেছেন রুবিডিয়াম পরমাণু নিয়ে। রুবিডিয়াম গ্যাসের এক লক্ষ পরমাণুকে একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে। তার পর সেই ভ্যাকুয়াম চেম্বারটিকে ঠান্ডা করা হয় পরম শূন্যের এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরের তাপমাত্রার ২০০ কোটি ভাগের এক ভাগে। তারপর সেই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা রুবিডিয়াম অণুগুলিকে একটি টাওয়ারের উপর থেকে ৩৯৩ ফুট নীচে ফেলে দেন। তাতেই মাত্র দু’সেকেন্ডের জন্য পরম শূন্য তাপমাত্রার সবচেয়ে কাছে পৌঁছনো সম্ভব হয়।
আরআই