ধাপে ধাপে বাড়ছে নির্বাচনি সহিংসতা

১১ জানুয়ারী ২০২২

দেশে ধাপে ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা বেড়েই চলেছে। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সহিংসতায় মারা গেছেন প্রায় দেড় শতাধিক, আহতের সংখ্যাও অনেক। বিচারে এবারের সহিংসতার ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করেছে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)। আর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান ইউপি নির্বাচনকে ‘রক্তাক্ত নির্বাচন’ আখ্যায়িত করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয় খোদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মধ্যেও। সহিংসতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে কঠোর নির্দেশনাও দেয় কমিশন। কিন্তু ইসির নেওয়া পদক্ষেপ দৃশ্যত খুব একটা কাজে আসেনি। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলেই মনে করছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বিষয়টি উল্লেখ করে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, দেশের মানুষ রক্তাক্ত নির্বাচন দেখতে চায় না। তবে এ সংহিসতার দায় নিতে রাজি নয় ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ  সহিংসতার দায় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের।  দলীয় প্রতীকের এ নির্বাচনে এবার অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ নেয়নি। তারা অংশ নিলে সহিংসতা আরও বাড়তো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কেউ কেউ। মোট আট ধাপের মধ্যে এখনও তিন ধাপের নির্বাচন হয়নি।  আগের ধাপগুলোর মতোই বাকি ধাপগুলোতেও সহিংসতা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউপি নির্বাচন সংক্রান্ত আসকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত বছর নির্বাচন শুরুর পর সহিংসতার ঘটনা ঘটে ৬৭২টি। প্রথম দুই মাসে ছোটখাটো কয়েকটি সহিংসতা ঘটলেও কেউ মারা যায়নি। মার্চ মাসে মারা যায় ১০ জন, জুনে ১৫ ও সেপ্টেম্বর ২১ জনে গিয়ে দাঁড়ায় সেই সংখ্যা। নভেম্বরে ৫৬ জন ও ডিসেম্বরে নিহত হয় ২৬ জন। সব মিলিয়ে গত বছর নিহত হয় ১১৩ জন,  আহত হয়  সাত হাজার ২০১ জন। এ প্রতিবেদন তৈরির পরবর্তীতে আরও ১৪ জন নিহত হয়। এর মধ্যে পঞ্চম ধাপে ভোটের দিনই নিহত হয় ১১ জন। আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে  নির্বাচনি সহিংসতায় ১৪৭ জন মারা যায়। ৭১১টি সংহিসতার ঘটনা ঘটেছিল, ৯ হাজার ৩৮৭ জন আহত হয়। প্রতিবেদনে আসক  বলছে, গত দুই মাসে ঘটা সহিংসতা ও প্রাণহানির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০১৬ সালের সহিংসতার পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যেতে পারে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৪ টিতেই প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ জনের প্রাণহানি হয়েছে নরসিংদীতে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৮৩ ও ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। ১৯৮৮ সালে প্রাণহানিতে রেকর্ড হয়- ৮০ জন নিহত হয়। এছাড়া ১৯৯৭ সালে ৩১ জন, ২০০৩ সালে ২৩ জন এবং ২০১১ সালে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৬ সালে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে শতাধিক।

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর