সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার মুক্ত হয় বগুড়া

১২ ডিসেম্বর ২০২১

দীপক সরকার, বগুড়া:

১৩ ডিসেম্বর বগুড়া পাক হানাদারমুক্ত দিবস। সম্মুখ যুদ্ধে টিকতে না পেরে ১৯৭১ সালের এ দিনে বগুড়ার কয়েকটি জায়গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। যুদ্ধে পাক বাহিনীর অফিসারসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ডিসেম্বরের শুরুতেই বগুড়ায় আব্দুস সবুর সওদাগর ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা সৈয়দ ফজলুল আহসান দিপুর নেতৃত্বে দুটি দল প্রায় একই সঙ্গে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে। ২ ডিসেম্বর তারা পাক বাহিনীর ১১ জন সদস্যকে সারিয়াকান্দি ও গাবতলী থেকে আটক করে। এর মধ্যে পাঁচজন মারা পড়ে। ছয়জনকে মিত্র বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ৮ ডিসেম্বর দল নিয়ে ঝড়ের গতিতে তারা বগুড়ায় এসে পৌঁছান । ফুলবাড়ি এসে হানাদারদের সঙ্গে তুমুল লড়াই করে। এরপর কৌশলগত কারণে তারা শহরের ভেতরে প্রবেশ করে আবার ফিরে যান ফুলবাড়ি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মরহুম মখলেসুর রহমানের বাড়িতে। এদিকে ১৩ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনী বগুড়া শহর পুরো নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর বিশিষ্ট প্রকৌশলী আওরঙ্গজেবের নেতৃত্বে সারিয়াকান্দি থেকে তারা শহরে পৌঁছান।

অন্যদিকে ১০ ডিসেম্বর সকালে মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউনটেন্ট রেজিমেন্টের বিগ্রেডিয়ার প্রেম সিংহ ৯ জন বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও এক ব্রিগেড সৈন্য নিয়ে শহর থেকে ৩ মাইল উত্তরে চাঁদপুর, নওদাপাড়া এবং ঠেঙ্গামারা গ্রামের মধ্যবর্তী লাঠিগ্রামের কাছে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নেন। সেখানে ৩ দিন ভয়াবহ সম্মুখ লড়াইয়ের পর মিত্র বাহিনীর আর্টিলারি ডিভিশন ট্যাংক নিয়ে শহরে ঢোকে। সেদিন এসব এলাকার অকুতোভয় অসংখ্য যুবক জীবন বাজি রেখে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে শহরবাসী ও মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দ উল্লাস করেন।

১৩ ডিসেম্বর সকালে শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক-হানাদার বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয় এবং সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। বেলা ৩টার দিকে পাক হানাদার বাহিনীর বিগ্রেডিয়ার এলাহী বক্স প্রায় ৭’শ জন সৈন্য ও অস্ত্রসহ প্রেম সিংহের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তাদের বন্দি করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ে মিত্র বাহিনীর হেফাজতে রাখা হয়। বগুড়া শহরে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার রক্তলাল পতাকা।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম মন্টু বলেন, ১৩ ও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলার সবগুলো উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদার রহমান হেলাল বলেন, বগুড়া হানাদার মুক্ত হয় ১৩ ডিসেম্বর। ওই দিন মহাস্থানে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ হয়। এতে পাক বাহিনীর অফিসারসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। পরে শহরের অ্যাডওয়ার্ড পার্কে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এছাড়াও একই দিন জেলার নন্দিগ্রাম ও কাহালু এলাকা পাক হানাদার মুক্ত হয়।

এদিকে বগুড়া হানাদারমুক্ত দিবসকে প্রতিবছরই যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এবারও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ক্লাব সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

 

এমকে


মন্তব্য
জেলার খবর