১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কোন ঠাসা হয়ে পড়া পাকবাহিনী উপায়ন্ত না পেয়ে এ দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। বাঙালি জাতি পুরোপুরিভাবে পায় পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি, বিজয়ের আনন্দ।
সেই ৭১ থেকে ২০২১, হাটি হাটি পা পা করে ৫০ বছরে দাঁড়িয়েছে জাতির বিজয়ের বয়স। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যথাযথ মর্যাদায় ও ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি পালন করছে তার বিজয় দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা জাতিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, পাশাপাশি দিবসটির তাৎপর্ তুলে ধরেছেন। চরম আনন্দের দিনে জাতি ভুলে যায়নি বিপদের সময়ে পাশে থাকা বন্ধু দেশ ভারতকে। তাই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বিজয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগের দিনেই ঢাকায় এসেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি বিজয়ের রাস্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করছেন।
কর্মসূচির মধ্যে- প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে। মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত সদস্যরা, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী, ভারতের রাষ্ট্রপতিও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি সব ভবনে এ দিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহকে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকায় সজ্জিত হবে। ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাদ্য বাজাবেন বিভিন্ন বাহিনীর বাদক দল। আগের রাতেই সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হবে। স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে ডাক বিভাগ। দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনা হবে মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে। উন্নতমানের খাবার পরিবেশন হবে এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্রসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
এমকে