ক্রিকেটের মানুষ তিনি। জাতীয় দল থেকে অবসরে গেলেও ক্রিকেটারদের নিয়ে সব সময় ভাবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করতে চান। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, মাশরাফি চাইলে তাকে বোর্ডে সম্পৃক্ত করবে বিসিবি। তবে দেশের একটি সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেছেন, এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব পাননি তিনি। আর জাতীয় দলের চাইতে তৃণমূল নিয়ে আগ্রহ বেশি মাশরাফির। তিনি মনে করেন, কাজ করার সুযোগ বেশি থাকে এ পর্যায়েই।
দীর্ঘদিন অধিনায়কের গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বেই সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে ওঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল, প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জয় সবই মাশরাফির হাত ধরে। দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছিলেন তিনি। মাশরাফির বিদায়ের পর ড্রেসিংরুমে পূর্বের সেই অবস্থা নেই। বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মানসিক দূরত্ব্ের গুঞ্জন, ড্রেসিংরুমে কেমন যেন একটা অস্বস্তি। ঘরে বাইরে কোথাও ছন্দে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও। অনেকেই মনে করেন মাশরাফির মতো কেউ বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলে ক্রিকেটারদের সমস্যাগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। এসবের ভেতরেই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মাশরাফি চাইলে তার দুয়ার খোলা।’ এতে প্রশ্ন উঠেছে, বিসিবি কি মাশরাফিকে কোনো দায়িত্বে আনতে চাইছে? মাশরাফি বিষয়টি ব্যাখা করেছেন এভাবে, ‘দুয়ার খোলা বা বন্ধ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। এটাই সত্যি কথা। পাপন ভাইয়ের সঙ্গে যতটা কথা হয়েছে... যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়েছে, সেটা গোপনই রাখা উচিত। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সম্পর্কিত কিছু আলোচনা হয়নি। সুনির্দিষ্ট বা আলাদা করে বলার মতো কিছু হয়নি। একেবারে কমন জিনিস। গভীর কিছু না। বাংলাদেশ ক্রিকেটে আমার ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
সাক্ষাতকারে মাশরাফি আরেকটি বিষয় নিশ্চিত করেছেন যে, জাতীয় দল নিয়ে কাজ করার কথা নিজ থেকে কখনোই বোর্ডকে বলবেন না তিনি। মাশরাফি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি এমন একটা প্ল্যাটফর্মে আছি, আমি তো বলতে পারবো না কিছু। ক্রিকেট বোর্ড চিন্তা করবে তারা আমাকে কোথায় কাজে লাগাতে চায়। জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করাকে আমি কখনোই প্রাধান্য দেই না। আমার কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার জায়গা নেই বলেই মনে করি আমি। তারপরেও যদি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেয়া হয় অবশ্যই বিবেচনা করবো।’
মাশরাফি মনে করেন, জাতীয় দলের বাইরে কাজ করার জায়গা বেশি এবং সেদিকটাতেই বেশি নজর দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গা আছে (জাতীয় দলের বাইরে)। অনেক কাজ করার আছে। জাতীয় দল নিয়ে কাজ করার জায়গা নেই, আমরা ভুল ধারণা নিয়ে দৌড়াচ্ছি। একটা উদাহরণ দিই: জয় (মাহমুদুল হাসান), এসে ওপেন করছে টেস্ট ক্রিকেটে। এর আগেই তো ওকে নিয়ে অনেক কাজ করার ছিল। সে যেন প্রস্তুত হয়ে টেস্টে নামে। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাইফ হাসানকে টি-টোয়েন্টিতে নামানো হলো, সে প্রস্তুত কিনা... এসব নিয়ে কাজ করার ছিল। জাতীয় দল হলো সর্বশেষ পর্যায়, প্রস্তুত হয়ে সেখানে খেলবে ক্রিকেটাররা। ওটা হলো ক্যান্সারের ফোর্থ স্টেজের মতো। ওখানে ক্রিকেটাররা হয় বাঁচবে অথবা মরবে। এর আগের স্টেজে কাজ করার সুযোগ আছে অনেক। কাজ যদি করতে চাই সেটার সুযোগ নিচের সারিতেই। জাতীয় দলে অতটা সুযোগ নাই।’